কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হয় ২০২৫

কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হয় সে সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদুল আযহার একটি বড় অংশ হলো কোরবানি করা। ঈদুল আযহা এর দিন আমরা সাধারণত কোরবানি দিয়ে থাকি হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মত্যাগের স্মরণে।
কোরবানির-পশু-কেনার-সময়-কি-কি-দেখে-নিতে-হয়-২০২৫
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য আমরা যেই কোরবানিটি দিয়ে থাকি এটি খুবই সতর্কতা সহিত সমস্ত নিয়মকানুন মেনে বাছাই করা প্রয়োজন ও কোরবানির পশু কেনার সময় যেসব দিক দেখে নিতে হবে তা জানতে আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হয় 

কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হয়

কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হয় এটি সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ ঈদুল আযহা এর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোরবানি। আর তাই এই কোরবানির পরশু যদি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরোপুরি সঠিক না হয় তাহলে কোরবানি আল্লাহতালার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে নাও পারে। তাই আমাদের কোরবানির জন্য পশু কেনার সময় খুবই সতর্কতা হয়ে একটি পশু চেনা প্রয়োজন। 

পশু কেনার সময় অবশ্যই আপনাকে দেখতে হবে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পশুটি হালাল কিনা। এবং আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেমন প্রশ্নের শারীরিক গঠন ও আকৃতি যাচাই করে আপনাকে কিনতে হবে। সর্বদা কোরবানির জন্য পশু কেনার সময় পশুটি যেমন শারীরিক দিক থেকে ঠিক হতে হবে ঠিক তেমনি পশুটির বয়স হয়েছে কিনা এটা জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোরবানির পশু যদি বয়স না হয় তাহলে কোরবানি দেওয়াটা আপনার জন্য হালাল হবে না। 

তাই কুরবানীর পশু কেনার সময় সবার আগে আপনার পশুটির বয়স সম্পর্কে জানতে হবে এবং পশুটির বয়স ঠিক আছে কিনা এটা জানার পশুটি ক্রয় করতে হবে। সাধারণত গরু বা মহিষ কেনার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে গরু বা মহিষের বয়স যেন কমপক্ষে দুই বছর হয়। আবার একইভাবে ছাগল বা ভেড়া ক্রয় করার সময় আপনাকে দেখতে হবে যেন এই প্রশ্নটির বয়স কমপক্ষে এক বছর হয়। ও উট ক্রয় করার সময় দেখতে হবে কমপক্ষে পাঁচ বছর উটের বয়স হতে হবে।
তবে প্রত্যেকটা পশুরই বয়স বোঝার জন্য এদের দাঁত দেখা জরুরী কারণ পশুর দাঁত দেখেই তার বয়স নির্ধারণ করা যায়। যে বিষয়টি লক্ষ্য করতে হবে তা হলো পশুর শারীরিক গঠন ও পশুর আচরণ কেমন। এবং আপনাকে খেয়াল করতে হবে প্রচুর চোখ, নাক, কান, মুখ, চামড়া, ও পায়ের ক্ষুর ইত্যাদি দেখে আপনারা বুঝতে পারবেন পশুর শারীরিক অবস্থা কেমন। এই বিষয়গুলো দেখার পরে যদি আপনার কাছে মনে হয় পশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো তাহলে পশুটি আপনার জন্য অনেক ভালো হবে।

এভাবে আপনারা খুব সহজেই একটি ভালো পশু চিনতে পারবেন এবং আপনাদের কোরবানির জন্য বাছাই করতে পারবেন। তবে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই এই ক্ষেত্রে কোন প্রকার কমতি না রেখে সঠিক নিয়ম কারণ মেনে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাছাই করে ছোট হোক বা বড় হোক একটি পশু কোরবানি দেওয়া আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু আমরা আল্লাহতালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোরবানি করে থাকি তাই এই বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন।

আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি আরো অনেক বিষয়ে যেমন কিভাবে পশুর দাঁত দেখে তার বয়স নির্ধারণ করবেন। এবং কোন প্রশ্নটি আপনার জন্য ভালো আরও অনেক বিষয় জানতে পারবেন তাই আশা করি এই বিষয়গুলো জানার জন্য আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কোরবানির জন্য জায়েজ পশুটি বাছাই করার উপায়

কোরবানির জন্য জায়েজ পশু বাছাই করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কারণ হল আমরা কোরবানি করি আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্টি করার জন্য আর সেই কোরবানি যদি জায়েজ না হয় তাহলে তো আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবেন না। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদেরকে জায়েজ পশু বাছাই করে নিতে হবে। তাই বলা যায় কোরবানি করার জন্য জায়েজ পশু বাছাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। 

জায়েজ পশু বাছাই করার জন্য আমাদেরকে খুঁজতে হবে এমন ধরনের পশু যাতে কোন প্রকার ঝামেলা বা ভেজাল না থাকে। আমাদের কুরবানির জন্য যে পশু গুলি হালাল করা হয়েছে সেগুলো হলো গরু ,মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি আমরা সাধারণত এই সব ধরনের পশু কুরবানী করে থাকে তাই এই পশুগুলো বাছাই করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে দেখতে হবে পশু টি আমাদের কোরবানির জন্য জায়েজ হবে কিনা। 

আমরা যেভাবে বুঝবো যে কোন পশুটা আমাদের জন্য চায় তা নিচে বর্ণনা করা হলো। আমরা পশুটি কেনার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে প্রথমত পশুটার বয়স কেমন। যেন যেহেতু আমরা জানি গরু বা মহেশ হলে দুই বছর কমপক্ষে বয়স হতে হবে ও ছাগল বা ভেড়া হলে এর বয়স এক বছর হতে হবে কমপক্ষে এবং উট হলে এর কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়স হতে হবে তাহলে পশুটা আমাদের জন্য জায়েজ হবে কোরবানিতে। 

পশুর যদি বয়স না হয় তাহলে কিন্তু পশুটা কোরবানি হিসেবে জায়েজ হবে না তাই বয়সের ক্ষেত্রে আমাদের ধারণা রাখা এবং সতর্ক থাকা খুবই জরুরী।বয়সের পাশাপাশি পশুটি রোগ মুক্ত কিনা এবং এর নাক, কান, গলা ও মাথা এবং পায়ের ক্ষুর কেমন তা দেখে নিতে হবে। পশুর চোখে যদি কোন প্রকার স্রাব বা ঝাপশানো কিছু থাকে তাহলে সেই পশুটি কোরবানি না দেওয়া উচিত। হয়তো আপনারা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমাদের কি ধরনের পশু কোরবানি দেওয়া প্রয়োজন। 

তবে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য আমাদেরকে সব সময় ইসলামিক সব নিয়ম নীতি মেনে ঈদুল আযহার এই দিনটি অর্থাৎ এই কোরবানির দিনটি সুন্দরভাবে সতর্কতাশ হয়ে পালন করা প্রয়োজন যেন আল্লাহতালা আমাদের কোরবানিতে সন্তুষ্টি হন। আরো কোরবানির পশু কেনার সময় যেসব বিষয়ে আমাদের জানাটা খুবই প্রয়োজন তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আরো আলোচনা করা হয়েছে তাই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

পশুর দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করার উপায়

পশুর দাঁত দেখে বয়সে নির্ধারণ করা উপায়টা জানা আমাদের সবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ পশুর বয়সের নির্ধারণ করার মত একটি উপায় আমরা বাঙালিরা জেনে থাকি তা হল দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করার উপায়। এই দাঁত দেখে এই দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করার উপায় কি অনেক প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এখন আমরা এই কন্টেনের মাধ্যমে জানবো কিভাবে একটি পশুকে দেখে তার বয়স নির্ধারণ করা যায়। 

আমরা সাধারণত বয়স নির্ধারণ করতে গেলে দাঁত দেখে থাকি পশুর দাঁত কয়টা উঠেছে কিন্তু আমরা জানি না। কত বছর বয়সে কয়টা দাঁত উঠে। গরু বা মহিষের বেলায় এদের জন্মের পরে কোন প্রকার দাঁত থাকে না। সাধারণত পশুর বয়স বলার জন্য তার সামনের দাঁত দেখে বয়স নিয়ে ধারণ করা হয়। গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এদের বয়স যখন এক থেকে দেড় বছর হয় তখন এদের দুধের দাঁত ওঠা শুরু করে এবং এদের যখন দুই বছর বয়স হয় তখন এদের সামনের দাঁত অর্থাৎ এদের বয়স প্রাপ্তদের যেমন দাঁত থাকে এদেরও তেমন দুই বছর পর হওয়ার পরপরই সামনে দাঁত বের হয়। 
এই দাঁতগুলো দেখে আমরা বুঝতে পারি যে গরু বা মহিষটির দুই বছর পার হয়ে গেছে। আমার ঠিক তেমনি ছাগল বা ভেড়ার ক্ষেত্রে এদের যখন এক বছর বয়স হয় তখন এদের সামনে একজোড়া দাঁত বের হয় অর্থাৎ যে ছাগলের সামনে এক জোড়া দাঁত রয়েছে তার বয়স এক বছর এবং যার দুই জোড়া দাঁড়া রয়েছে তার বয়স ২ বছর। আবার যখন উটের বয়স নির্ধারণ করতে যাবেন তখন দেখবেন এর দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করাটা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। 

কারণ উটের ছোট থেকে দুধ দাঁত সাদা হয়ে থাকে এবং অনেক বড় বড়। এ কারণে এদের বয়স নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে এদের জোড়া সংখ্যার দাঁতগুলো গুনতে হবে এবং দেখতে হবে দাগগুলো ক্ষয় হয়েছে কিনা এবং হলদে প্রকৃত হয়ে গেছে কিনা তাহলে বুঝবেন এই উটের বয়স হয়েছে। এভাবেই আপনারা আপনাদের কোরবানির পশুটির বয়স নির্ধারণ করতে পারবেন। হয়তো এতক্ষণে আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে কোরবানি করার ক্ষেত্রে পশুর বয়সটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে কিভাবে পশুর বয়স নির্ধারণ করা যায়।

পশুর শারীরিক ত্রুটি যাচাই করার কৌশল

পশুর যদি শারীরিক কোন ত্রুটি থাকে তাহলে সেই পশুটি কি কোরবানির জন্য জায়েজ হবে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে তাই আমাদের উচিত কোন ত্রুটিবিহীন পশু নির্বাচন করে কোরবানি করা। আমরা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরব এসব কারণ বা এসব ত্রুটি থাকলে সে পশু আপনি বাছাই করা থেকে বিরত থাকবেন। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
  1. পশুটি যদি হাঁটতে চলতে সমস্যা হয় তাহলে এমন পশু ক্রয় না করা।
  2. কান ফোলা বা কানে কোন প্রকার ঘা থাকা
  3. নাক ফোলা বা নাকে কোন প্রকার সমস্যা থাকা নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়
  4. মুখ জিব্বা বা দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া এমন পশু ক্রয় করবেন না
  5. পশুর পায়ে খুরা তে ইনফেকশন থাকা
  6. ঠিকমতো খাবার না খাওয়া
  7. গায়ের লোমগুলো ঝরে পড়া
  8. পিট বেশি ফোলা থাকা
  9. প্রচুর অসামাজিক কার্যকলাপ
চামড়া ক্ষতবিক্ষত থাকা এবং অতিরিক্ত মাসি লাগা এই সমস্ত ত্রুটি সম্পন্ন পশুগুলি কেনা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ আমরা সবাই চাই দুটি বিহীন কোন পশু কোরবানি করতে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। তাই আমরা এই সমস্ত ত্রুটি সম্পূর্ণ পশু চেনা থেকে বিরত থাকবো এবং কোরবানি করা থেকে বিরত থাকবো।

হালাল উপায়ে পালিত পশু চেনার উপায়

আমরা সাধারণত আল্লাহর নামে ঈদুল আযহার দিন কোরবানি করে থাকি। তাই সে পশুটি যদি হালাল উপায়ে লালুতো পালিত হয় তাহলে আমরা আমাদের কোরবানিতে জায়েজ হিসেবে দিতে পারব না। তাই পশু ক্রয় করার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে পশুটি হালাল উপায়ে লালিত পালিত হয়েছে কিনা। পশু হালাল উপায়ে লালিত পালিত করা বা হালাল উপায়ে লালিত-পালিত পশু ক্রয় করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

আমরা আজকে জানবো কিভাবে আমরা বুঝবো পশু ক্রয় করার আগে যে এটি হালাল উপায়ে লালিত পালিত হয়েছে কিনা। হালাল উপায়ে লালিত পালিত পশু চেনার ক্ষেত্রে প্রথমে পশুর বয়সটা বুঝতে হবে এবং এরপরে বয়স অনুযায়ী পশুর শারীরিক গঠন ঠিক আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। পরবর্তীতে দেখতে হবে হালাল খাদ্য খাওয়ানো হয়েছে কিনা এ বিষয়ে ধারণা নিতে হবে। কারণ বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা নানারকম ওষুধ ব্যবহার করে পশুকে বয়স অনুযায়ী অনেক মোটা তাজা করে ফেলছেন অধিক লাভের আশায়। 

কিন্তু এই পশুগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আপনাকে সবার আগে পশু দেখে বুঝতে পারে যে এটি হালাল কি হারাম এমন ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। এবং পশুর আচার-আচরণ সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে যদি পশুটি বেশি উত্তেজিত হয় বা বেশি শান্ত হয় তাহলে এই সমস্ত পশু কেনা থেকে বিরত থাকবেন। আমাদের কোরবানি তখনই কবুল হবে যখন কোরবানি হালাল উপায় দেওয়া হয় এবং পশুটি হালাল হয়। তাই পরশু ক্রয় করার ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতার সহিত থাকা প্রয়োজন এবং হালাল উপায়ে লালন পালন করা পশু ক্রয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কোরবানির পশু ক্রয় করার জন্য ভালো বাজার নির্বাচন

কোরবানির জন্য পশু ক্রয় করার ক্ষেত্রে বাজারে নির্বাচন করাটা অনেক প্রয়োজনীয়। কারণ কোরবানির জন্য পশু কিনতে গিয়ে যদি কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন। আপনাকে দেখতে হবে যে বাজারটির অনেক সুনাম রয়েছে সেই বাজারে গিয়ে কোরবানির জন্য পশু বাছাই করা। এবং ঈদের বাজারটি আপনার আশেপাশে বা নিকটে রয়েছে সেই বাজারে গিয়ে পশু ক্রয় করা। এতে করে আপনার পশু ক্রয় করার পরে পশুটি নিয়ে আসতে কোন প্রকার ঝামেলা না হয়। আর নতুন জায়গা দেখলে পশু সব সময় উত্তেজিতবেশি থাকে। তাই সব দিক খেয়াল করে বাজার নির্বাচন করবেন।

কোরবানি করা আমাদের জন্য ফরজ নাকি সুন্নত

আমাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব? ফরজের নিচেরটা হচ্ছে ওয়াজিব। আমরা সাধারণত অনেকে আছি তাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করি না। সামর্থ্য থাকার পরেও কোরবানির না করাটা পাপ হবে। আমরা তো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি কোরবানি করাটা ওয়াজিব হচ্ছে এমন একটি কাজ যা করা বাধ্যতামূলক। নিচে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো এগুলো যদি কোন মানুষের ভিতরে থাকে তাহলে তার কোরবানি করা ওয়াজিব।
  1. প্রথমত মুসলিম হতে হবে
  2. প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে
  3. সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হতে হবে
  4. স্থানে অর্থাৎ নিজ এলাকায় বসবাস করতে হবে
  5. ৭.৫ তোলা সোনা বা ৫২.৫ তোলার রুপার সমপরিমাণ সম্পদের অধিকারই হতে হবে।
এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য যে মানুষের মধ্যে রয়েছে তার কোরবানি করা ওয়াজিব অর্থাৎ বাধ্যতামূলক। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও কোরবানি করে না সেই ব্যক্তি যেন আমাদের ঈদগাহের আশেপাশেও না আসে। অর্থাৎ আপনার এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আমাদের জন্য কোরবানি করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষয়। অতএব অবশ্যই আপনাদের যাদের সামর্থ রয়েছে সবাই কোরবানি করবেন।

কোরবানি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য

কোরবানি করা আমাদের ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানি করা অর্থ হল ত্যাগ করা অর্থাৎ এক কথায় কোরবানি হলো ভক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোন কিছু ত্যাগ করাকে বোঝায়। কোরবানির সূচনা ঘটেছিল হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সময় থেকে শুরু হয়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সময় থেকে কোরবানির এই ইতিহাসটি শুরু হয়েছে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে আল্লাহতালা অনেকবার স্বপ্নে দেখিয়েছেন তার সন্তানকে কোরবানি করার জন্য এর থেকে তিনি শিক্ষা নিয়ে বুঝতে পারেন যে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য অনেক বড় একটি পরীক্ষার প্রস্তুতি করেছেন। 

তিনি এই প্রস্তাবটি তার সন্তান হযরত ইসমাইল(আঃ) এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন। এবং এই পরীক্ষায় হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সন্তানকে কোরবানি করার সময় আল্লাহ তা'আলা একটি দুম্বাকে হযরত ইসমাইল আলাই সাল্লাম এর জায়গায় কোরবানি হিসেবে কবুল করেন। ও এই পরীক্ষায় হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তীর্ণ হন। তখন থেকে শুরু হয়েছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের এই ঈদুল আযহার দিনে কোরবানি করা। 
কোরবানি করার মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব কোন সম্পর্ক তৈরি করতে পারি। আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভ করতে পারি। এবং নিজেদের আত্মার শান্তি অনুভব করতে পারি। আমাদের কুরবানীর তিন ভাগের এক ভাগ যখন আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে দেই এবং একভাগ গরিব মানুষের মধ্যে যখন বিলিয়ে দেই তখন আমাদের মনের একটা প্রশান্তি আসে এবং মানুষের সাথে বন্ধুসুলভ ব্যক্তি সম্পর্ক তৈরি হয়। এর জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আমাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের কোরবানি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আশা করি আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের জন্য আল্লাহর নামে কোরবানি করব। আমরা মুসলিম হিসেবে অনেকেই হয়তো কোরবানি করিনা কিন্তু এতে আমাদেরই ক্ষতি হয়ে থাকে। আমরা যদি আমাদের আশেপাশের বা আমাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঘনিষ্ঠ না হয় সম্পর্ক বা তাদের হক তাদেরকে না দেই তাহলে এটা এক প্রকার পাপের অধিকারী হয়ে গেল। তাই প্রত্যেকটি মানুষের হক পূরণ করার প্রয়োজন এবং আপনার প্রতি যে মানুষটির হক রয়েছে সে হকটি পর্যাপ্ত পরিমাণ বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

তাই সর্বোপরি একটা কথাই বলি কোরবানি করা এবং হালাল কোরবানি করা আমাদের মুসলমানদের জন্য অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনারা হয়তো আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কোন ধরনের পশু কোরবানি করা যায় এবং কোন ধরনের পশু কোরবানি করা যায় না সব ক্ষেত্রে হালাল কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দান করা যায়। আপনার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে ততটুকু দিয়েই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিয়ত করুন। 

আল্লাহতালা দেখবেন আপনার কোরবানিটি কবুল করবেন। একজন ঈমানদার ব্যক্তি কখনোই রক্ত বা মাংসের জন্য কোরবানি করে না আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট লাভের জন্য কোরবানি করে থাকে। তাই কোরবানি করার আগে আমাদের নিজেদের নিয়তকে এবং ঈমানকে শক্ত করতে হবে আমরা যেন শুধুমাত্র মাংস বা রক্তের জন্য কোরবানি না করি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট লাভের জন্য আল্লাহতালার নামে কোরবানি করি।

কোরবানি পশু কেনার আগে চারটি বিষয় জেনে নিন

কোরবানি করা যেহেতু ওয়াজিব সেহেতু আমাদের কোরবানি করার ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে খুবই লক্ষ্য রাখতে হবে এগুলো হলোঃ

১. চোখের সমস্যা আছে চোখ ভিতরে ঢুকে যাওয়া বা বাইরে বের হয়ে আসা এমন কোন সমস্যা দেখা দেয় এমন কোন পশু কোরবানি না করা।

২. যে পশুর খুবই গুরুতর রোগ রয়েছে যেমন অতিরিক্ত জ্বর হওয়া ও পশু খেতে না পড়া বা চর্মরোগ সকল সমস্যা থাকলে সেই পশুটি কুরবানী না দেওয়া আমাদের জন্য শোচনীয়। কারণ এই সকল কারণে পশুর মাংস নষ্ট হয়ে যায় এবং আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. যদি কোন পশুর খোঁড়া রোগ হয় অর্থাৎ পশু হাঁটতে চলতে ঠিকমতো না পারে তাহলে সেই পশুটি কোরবানির জন্য যোগ্য না।

৪. পশু যদি দেখে আপনার কাছে মনে হয় পশুটি অনেক বেশি রোগাক্রান্ত বা এর কোন সমস্যা আছে এমন ধরনের পশু কোরবানি না করাই প্রযোজ্য।

কোরবানির জন্য সুস্থ ও অসুস্থ পশু চেনার উপায়

কোরবানির জন্য সবচেয়ে পূর্বে সুস্থ পশু বাছাই করতে হবে আপনাকে অর্থাৎ আপনাকে সুস্থ ও অসুস্থ পশু চিনতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক খামার জাত পশু হচ্ছে এবং কিছু কিছু অসাধু খামারির কারণে আমাদের দেশে সুস্থ পশু বাছাই করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে খামারিরা পশুদের কে নানান ধরনের ভ্যাকসিন দিয়ে খুব স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা করার জন্য মোটা তাজা করে তুলছে। আর এইসব মাংস খাওয়ার পরে আমাদের মধ্যে অনেক রোগ জীবাণু দেখা দিচ্ছে। 

তাই আমাদের প্রথমে চিনতে হবে কোনটা সুস্থ পশু ও কোনটা অসুস্থ পশু। বিশেষ করে দেখবেন যেসব পশু খুব কম বয়সে অনেক মোটা তাজা হয়ে ওঠে এইসব পশু ক্রয় না করাই ভালো। এবং যেসব পশুর শরীরে চাপ দিলে মাংস বসে যায় এইসব পশু ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা কারণে এসব পশুগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণে এদের শরীর ফুলে উঠেছে। বিশেষ করে গরুতে এখন বর্তমানে অনেক ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় যাতে গরু খুব তাড়াতাড়ি মোটা তাজা হয়ে ওঠে এবং এর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে অনেক মানুষের অনেক রোগ হয়ে থাকে। 

সুস্থ গরু সর্বদা নড়াচড়া করতে কোন সমস্যা হয় না এবং স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু যেসব গরুতে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় সেই গরুগুলো অধিক মাংসপেশির কারণে নড়াচড়া করতে সমস্যা হয় এবং এদের আচরণ ও অস্বাভাবিক হয়ে থাকে। আমরা যদি শুধু মাংস খাওয়ার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া গরুকে কোরবানি করি তাহলে এতে আল্লাহ তায়ালা অসুস্থ হতে পারে কারণ কোরবানি করার মূল লক্ষ্যই হলো আল্লাহ তাআলা কে সন্তুষ্ট করা। অতএব কোন উপকার জাতীয় খাদ্য দিয়ে লালন পালন করা গরুকে কুরবানী করা জায়েজ নাই। 

আমরা সব সময় চেষ্টা করব সুস্থ পশু সুস্থ গরু কোরবানি করার জন্য এবং অসুস্থ গরু ক্রয় করা থেকে বিরত থাকবো। সুস্থ গরু সবসময় সাধারণ থাকবে সুস্থ গরু নাকের নিচে ভেজা থাকে। এবং শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক নাই অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাফেরা করা বা স্বাভাবিক আচরণ ও স্বাভাবিক শারীরিক গঠন রয়েছে এমন গরুই কোরবানি করা যাবে। তবে কোন প্রকার গর্ববতী পশু কোরবানি করা জায়েজ নেই। আমরা হয়তো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি আমরা কিভাবে কোরবানির জন্য সুস্থ পশু বাছাই করব এবং অসুস্থ পশু থেকে বিরত থাকবো। 

সুস্থ ও অসুস্থ পশুর বাছাই করাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের সবসময় হালাল পশু কোরবানি করা এবং হালাল ভাবে লালন পালন করা পশু কোরবানি করা জায়েজ রয়েছে। তাই আমরা এমন কোন পশু কোরবানি করবো না যা হারাম ও হারাম ভাবে লালন পালন করা হয়েছে এতে আল্লাহতালা অসন্তুষ্ট হতে পারেন।

বাংলায় কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া

কোরবানি করার সময় দোয়া করা খুবই প্রয়োজন। কারন আল্লাহতালা সন্তুষ্টির জন্য আমরা যে পশুটি কোরবানি করতেছি সেটি যদি হালাল ভাবে কোরবানি না করি তাহলে তো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব না। আর আমাদের সবকিছু করার শুরুতেই আল্লাহতালা দোয়া করার জন্য বলে দিয়েছেন। আমরা দোয়ার মাধ্যমে যখন পশুটি কোরবানি করব তখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি হবেন এবং পশুটিও হালাল ভাবে কোরবানি হবে। কোরবানির দোয়াটি বাংলায় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া  মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি- জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

এই দোয়া পাঠ করে কেউ যদি আল্লাহু আকবার বলে পশু কোরবানি করে তাহলে পশুটি হালাল ভাবে কোরবানি হবে এবং আল্লাহ তা'আলা দরবারে পশুটি কবুল হবে। তাই আমাদের সবারই কোরবানি করার আগে কোরবানির দোয়া জানা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোরবানির পশু হালাল হলেও দোয়া পাঠ না করলে আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না কোরবানি। তাই হয়তো আপনার এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কোরবানি করার সময় দোয়া করা কতটা প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

লেখকের মন্তব্যঃ কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হয়

কোরবানির পশু কেনার সময় কি কি দেখে নিতে হবে এই সম্পর্কে হয়তো এতক্ষণে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোরবানির পশু সময় কি কি দেখে নিতে হবে এবং কোন কোন সমস্যা হয়ে থাকে এবং কোন পশুটি আপনার জন্য জায়েজ হবে ও হালাল হবে এইসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাই আপনি যদি আমাদের এই কন্টেন্টটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার কোন ধরনের পশু কেনা কোরবানির জন্য হালাল হবে। 

সবার আগে কোরবানির জন্য পশু কেনার সময় খেয়াল করতে হবে পশুটির বয়স এবং শারীরিক অবস্থা ও পশুটি হালাল ভাবে লালনীত পালিত হয়েছে কিনা এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তাহলে আপনার কোরবানিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কবুল হবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করা প্রয়োজন। অবশেষে বলা যায় আপনাদের যদি আমাদের এই কন্টেনিটি থেকে কোরবানির পশু সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কোন জানার আরো কিছু থাকলে এডমিনের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং কমেন্টে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পজিশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url